লোন কি? লোনের প্রকারভেদ, ঝুকি ও লাভ

লোন কি? লোন কত প্রকার ও কি কি? লোন (Loan) আমাদের কাছে খুবই একটি পরিচিত শব্দ। আমরা আমাদের আশেপাশের লোকজনের কাছে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের লোনের কথা শুনে থাকি।

লোনে আছে অনেক সুবিধা ও সুবিধা। তাই আমাদের প্রত্যেকেরই লোন নেওয়ার পূর্বে অবশ্যই এর ভালো ও খারাপ ‍দিকগুলি জানা উচিত।

আজকে আমার জানবো লোন কি (What Is Loan?) লোনের সুবিধা ও অসুবিধা (Benefits of Loan) লোন নেওয়ার জন্য কি কি লাগে? কত টাকা থেকে কত টাকা লোন নেওয়া যায়, ইত্যাদি।

লোন কি? লোনের প্রকারভেদ, ঝুকি ও লাভ

লোন কি? (What Is Loan?)

লোন শব্দের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। লোন শব্দটির অর্থ হচ্ছে ধার-কর্জ কিংবা ঋণ করা। আমরা যখন আমাদের প্রয়োজনে অন্য কোন ব্যক্তি, কোন সংস্থা বা ব্যাংক থেকে যে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে ঋণ নিয়ে থাকি তাকেই লোন বলে।

ধরুন, আপনার পরিবারের কেউ খুবই গুরুতর অসুস্থ। এখন আপনার মোটা অংকের টাকার প্রয়োজনে। আপনার একজন নিকট আত্নীয়, কোন সংস্থা ও ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার টাকা নিলেন। আপনি এখানে যে টাকা নিলেন এটাই হল লোন।

তবে বর্তমানে আমাদের দেশে সাধারনত লোন ব্যাংক এবং এনজিও সংস্থা থেকে নিয়ে থাকে। আপনি খুজ নিলে আপনার বাড়ির আশে পাশেই অনেক এনজিও দেখতে পাবেন, যারা বিভিন্ন ধরনে লোন দিয়ে থাকে।

আমাদের আরও ওয়েবসাইটের পোস্ট: 


 

 


লোনের তিনটি প্রধান উপাদান

  1. Principal ( মূলধন)
  2. Rate of Interest ( সুদের হার)
  3. Loan Duration ( সময়কাল)

মূলধন

মূলধন হচ্ছে আপনি যে টাকা কোন সংস্থা বা ব্যাংক থেকে নিচ্ছেন। ধরুন, আপনি ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার টাকা লোন নিচ্ছেন, এটিই হল মূলধন।

সুদের হার

সুদের হার হচ্ছে, আপনি যে টাকাটা বেশি দিবেন সেটি। আপনি যে ৫০ হাজার টাকা লোন নিলেন এর জন্য যে বাড়তি টাকাটার শতকরা হিসাব হচ্ছে সুদের হার।

লোনের সময়কাল

আপনি লোন নেওয়ার পর তা কতদিনে পরিশোধ করবেন,তাহলে লোনের সময়কাল (Loan Duration)।

লোন কত প্রকার (What Are The types of Loans?)

এতক্ষণ আমরা জানলাম লোন কি? (What Is Loan?), এখন আমরা জানবো লোন কত প্রকার ও কি কি?

লোন ০৬ প্রকার। নিচে ০৬ প্রকার লোন এর বিবরণ দেওয়া হলো।

০১. হোম লোন (Home Loan)

 

 

০২. শিহ্মা লোন (Students Loan)

০৩. গাড়ির লোন (Car Loan)

০৪. ব্যক্তিগত লোন (Car Loan)

০৫. ব্যবসায়ী লোন (Buisness Loan)

০৬. স্বর্ণ লোন (Gold Loan)

হোম লোন (Home Loan)

আপনি যদি বাড়ি নির্মাণ করতে চান, কিন্তু আপনার কাছে সূর্য পর্যাপ্ত পরিমান টাকা না থাকে তাহলে আপনি হোম লোন নিতে পারেন।

আপনি যে বাড়ি নির্মাণের জন্য লোন নিবেন এবং সেটি সুদ সমেত নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর ফেরত দেবেন এটিকে হোম লোন (Home Loan) বলে।

শিহ্মা লোন (Students Loan)

ধরুন একজন ছাত্র তার পড়ালেখার খরচ চালাতে পারছেন না। তার জন্য সে একটি লোন নিল তার পড়ালেখার খরচ চালানোর জন্য। এবং নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরে শুধু সময় সেটি ফেরত দিল এটি হচ্ছে শিক্ষা লোন (Students Loan)।

গাড়ির লোন (Car Loan)

ধরুন আপনি একটি গাড়ি কিনতে চাচ্ছেন কিন্তু গাড়ি ক্রয় পর্যাপ্ত টাকা আপনার কাছে নেই, এর জন্য আপনি আপনি গাড়ির লোন নিতে পারেন। এখানে গাড়ির ক্রয় করার জন্য টাকা নেওয়ার যে বিষয়টি এটিই হলে গাড়ির লোন।

ব্যাক্তিগত লোন (Personal Loan)

ব্যক্তিগত বিশেষ প্রয়োজনে যে লোনটি নেয়া হয় সেটিকে পার্সোনাল লোন বলে। পার্সোনাল লোন হচ্ছে আনসিকিউরড লোন। ব্যক্তিগত লোনের সুদের হার অনেক বেশি হয়ে থাকে অন্যান্য লোন এর তুলনায়।

 

 

ব্যবসায়ী লোন (Buisness Loan)

ধরুন আপনি একটি ব্যবসা শুরু করতে চান কিন্তু তার জন্য আপনার কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা নাই ব্যবসা শুরু করার জন্য। আপনি তার জন্য একটি লোন নিলেন এবং সেটি সুদ সমেত নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরে কর্তৃপক্ষকে দিয়ে দিলেন। এটি হচ্ছে ব্যবসায়ী লোন। ব্যবসায়ী লোন অনেক বেশি পরিমাণে টাকা দিয়ে থাকে।

স্বর্ণ লোন (Gold Loan)

আপনি যদি অল্প সময়ের জন্যে কোন লোন নিতে চান, তাহলে আপনি হোম লোন নিতে পারেন। হোম লোনে সময়কাল অনেক কম হয়। সাধারনত ১-২ বছরের মধ্যে এই লোন পরিশোধ করতে হয়।

লোন কেন নেয়? (Reason For Taking Loan)

লোন নেওয়ার পিছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে যে কারণে সবাই একটু মোটা অংকের টাকার প্রয়োজনে লোন নিয়ে থাকে বিভিন্ন সমস্ত ব্যাংক থেকে।

ধরুন, আপনার একটি ঘরের বিশেষ প্রয়োজন, কিন্তু আপনার কাছে সেটার নিমাণের পর্যাপ্ত টাকা নেই। এখন কিন্তু আপনি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ও এনজিও সংস্থা থেকে তাদের নির্দেশনাবলী মেনে লোন নিতে পারবেন। এবং সে টাকা দিয়ে আপনার ঘর নির্মাণ করতে পারবেন।

এরকম বিশেষ প্রয়োজনে খুব সহজে লোনের মাধ্যমে টাকা পাওয়ার জন্য সবাই লোন নিয়ে থাকে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে লোন নেওয়া খুবই সহজ। আপনি খুব সহজেই আপনার নিকটস্থ ব্যাংক ও এনজিও সংস্থার কাছ থেকে আপনার প্রয়োজনীয় লোন নিতে পারবেন।

লোন নেওয়ার জন্য ডকুমেন্ট (Documents For Loan)

লোন নেওয়ার জন্য আপনাকে প্রয়োজনীয় কাগজপাতি দেওয়া লাগবে। নিচে প্রয়োজনীয় কাগজপাতির লিস্ট দেওয়া হল।

  • আবেদন ফর্ম যথাযথভাবে পূরণ এবং স্বাক্ষর করতে হয়।
  • আবেদনকারীর ফটোগ্রাফ / ছবি।
  • জাতীয় পরিচয় পত্র/ন্যাশনাল আইডি কার্ড।
  • অফিস আইডি কার্ড।
  • বেতনের স্লিপ
  • ট্রেড লাইসেন্স
  • অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠানের স্মারকলিপি এবং অ্যাসোসিয়েশন / অংশীদারি চুক্তির নিবন্ধ
  • ভাড়া চুক্তি / মালিকানা দলিলসমূহ
  • মোবাইল ফোন / গ্যাস বিল / ইউটিলিটি বিল ইত্যাদির বিলের কপি
  • টিআইএন কিংবা আয়কর রিটার্নের অনুলিপি।
  • চেকের পাতা।
  • বৈধ পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্সের অনুলিপি, অন্যান্য
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট (কমপহ্মে ৬ মাস)
  • অন্যান্য ব্যাংক ঋণ অনুমোদনের চিঠি (স্যাংশন লেটার)
  • অন্যান্য আয়ের তথ্য
  • ভাড়া / অন্যান্য আয়ের পরিদর্শন প্রতিবেদন
  • অন্যান্য নথি যদি থাকে
  • গ্যারান্টারের জাতীয় পরিচয়পত্র, অফিস আইডি, ভিজিটিং কার্ড।

এছাড়াও আরও কাগজপত্র লাগতে পারে

  • গাড়ি উদ্ধৃতি
  • যানবাহনের নিবন্ধন
  • গাড়ির বিবরণ
  • যানবাহনের বীমা

লোন নেওয়ার ঝুকি? (The Risk of Taking a Loan?)

লোন নেওয়ার তেমন কোন ঝুকি নেই। তবে আপনি যদি আপনার সম্পদের দলিল দিয়ে লোন নিয়ে থাকেন। এবং নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে তা পরিশোধ করতে না পারেন, তাহলে আপনার সম্পদ তারা নিলাম তুলে বিক্রি করে দিতে পারবে। তাই বড় লোন নেওয়ার আগে সবার ভাবা উচিত যে তার ফেরত দেওয়ারমত হ্মমতা আছে কি না।

কিছু কথা,

লোন নেওয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে ও প্রয়োজনের তাগিদে কোন লোন নেয়া উচিত হবে না। বিশেষ দরকার ছাড়া লোন নেওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কেননা ঋণ মানুষকে মানসিক চাপে রাখে।

আমার মতে, লোন থেকে দূরে থাকাই ভালো যতটা সম্ভব। কেননা পরিষদের ক্ষেত্রে দেরি হলে ঝামেলায় পড়তে পারেন। তাই লোন নেওয়ার সময় খুব হিসাব করে লোন নিবেন।

শেষ কথা,

আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে লোন কি? লোন নিয়ে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি। তারপরেও যদি আপনার লোন সমন্ধে কোন কিছু জানার বা কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আপনাদের কমেন্ট আমাদেরকে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top