সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কি? কিভাবে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করবেন?

মার্কেটিং করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় এবং কার্যকরী একটি মাধ্যম। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে মার্কেটিং করে কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যের প্রচার করে থাকে। প্রায় সমস্ত দেশি-বিদেশি কোম্পানি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে নিয়েছে।

আমরা সোশ্যাল মিডিয়া খুললেই এ সকল কোম্পানির মার্কেটিং এর বিভিন্ন কর্মযজ্ঞ দেখতে পায়। আবার সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এ অনেকে ক্যারিয়ারও করছেন। অনেকে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ম্যানেজার এর চাকরি, ফ্রিল্যান্সিং এসব কাজ করছেন।

আজকে আমরা সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং নিয়ে বিস্তারিত জানব। পাশাপাশি আমরা আলোচনা করব সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কেন করবেন? কিভাবে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং শিখবেন? পাশাপাশি আমরা সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করে আয় করার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব।

স্যোশাল মিডিয়া মার্কেটিং
স্যোশাল মিডিয়া মার্কেটিং

আর্টিকেলে যা যা আছেঃ

সোশ্যাল মিডিয়া কি? (What is Social?)

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং নিয়ে আলোচনা করার পূর্বে আমাদের জানা উচিত যে আমরা সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আসলে কি বুঝি। 

যে অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে আমরা একে অপরের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারি অনলাইনে তাকে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে পারি। 

আমাদের প্রায় সকলেরই সোশ্যাল মিডিয়ায় কোন না কোন অ্যাকাউন্ট আছে। বিখ্যাত কয়েকটি সোশ্যাল মিডিয়া হল ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, ইত্যাদি। তবে বাংলাদেশে যে সোশ্যাল মিডিয়াতে সবচাইতে বেশি ব্যবহার করা হয় তা হল ফেসবুক।

বাংলাদেশের শুধু ফেসবুকের এই কয়েক কোটি ইউজার আছে। এজন্য যে সাইটটিতে বাংলাদেশ সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করা হয় তা হলো ফেসবুক কারণ এর ব্যবহারকারী সবচাইতে বেশি বাংলাদেশে। 

ফেসবুকের পর ইনস্টাগ্রাম বাংলাদেশের বহুল ব্যবহৃত একটি সোশ্যাল মিডিয়া সাইট। তরুণ-তরুণীদের মাঝে বিশেষভাবে ইনস্টাগ্রাম খুবই জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।

বহির্বিশ্বে টুইটার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বহুল ব্যবহৃত হলেও বাংলাদেশে টুইটার খুব অল্পই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কি? (What is Social Media Marketing?)

আমরা জানি মার্কেটিং কোথায় করা হচ্ছে এর উপর ভিত্তি করে মার্কেটিংকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি। যথা অনলাইন মার্কেটিং এবং অফলাইন মার্কেটিং। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং অনলাইন মার্কেটিং এর একটি অংশ এর মধ্যে পড়ে।

সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে যেই মার্কেটিং করা হয় তাকে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বলে। 

আমরা ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রাম চালানোর সময় প্রায় বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন দেখে থাকি। এ বিজ্ঞাপন গুলো হতে তারা ছবির মাধ্যমে বা ভিডিওর মাধ্যমে আবার কখনও কখনও গল্প আকারে উপস্থাপন করে।

এই বিজ্ঞাপনগুলোর মূল উদ্দেশ্য থাকে গ্রাহকদের কাছে তাদের কোম্পানির পণ্য সম্পর্কিত বার্তা পৌঁছে দেওয়া। এক্ষেত্রে তারা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে তাদের মার্কেটিং করছে। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে তাদের এই ধরনের মার্কেটিং।

বিভিন্ন দেশি-বিদেশি কোম্পানিগুলো এখন সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর জন্য আলাদা টিম রাখছে। এই টিমের সদস্যরা সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং সম্পর্কে বিশেষ ভাবে অভিজ্ঞ হয়ে থাকে।

আপনার জন্য আরও: 

অর্গানিক সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং (Organic Social Media Marketing)

অর্গানিক সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং হল কোন ধরনের বিজ্ঞাপন ছাড়াই যে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং সম্পন্ন করা হয়। 

এই ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর উদাহরণ হল ধরুন কোন ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রাম পেজ এ লক্ষাধিক ফলোয়ার আছে। এখন তারা যদি কোন পোস্ট করে তবে তা সহজেই তাদের এই লক্ষাধিক ফলোয়ারের কাছে পৌঁছে যাবে এইভাবে গ্রাহকদের নিকটে পৌঁছানো যায়। 

যেহেতু এই মার্কেটিং পদ্ধতিতে টাকা দিয়ে মার্কেটিং করতে হয় না অর্থাৎ পেজটির আগের ফলোয়ার কে ব্যবহার করা হয়। এইজন্য এধরনের মার্কেটিংকে অর্গানিক সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বলে।

যখন কোন পণ্যের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে অনেক লাইক এবং ফলোয়ার থাকে তখন তারা সহজেই অর্গানিক মার্কেটিং করতে পারে 

পেইড সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং (Paid Social Marketing)

এই মার্কেটিং পদ্ধতিতে মার্কেটিং করার জন্য বিভিন্ন মাধ্যম কে কিছু পরিমাণ অর্থ দিতে হয়। এইজন্য এ ধরনের মার্কেটিং পদ্ধতি কে পেইড সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বলে। 

পেইড সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনকে টাকা দিতে হয়। আপনি কোন পদ্ধতিতে মার্কেটিং করছেন এর উপর নির্ভর করছে পেইড সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর জন্য কাকে টাকা দিতে হবে। 

যেমন আপনি যদি ইনফ্লুয়েন্সিয়াল মার্কেটিং করেন তবে ইনফ্লুয়েন্সিয়াল দের কে টাকা দিতে হবে। 

আবার আপনি যদি ফেসবুক এর মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করেন তবে ফেসবুক কে এর জন্য টাকা দিতে হবে।

মূল কথা হল ফেসবুক বা ইনফ্লুয়েন্সার বা অন্য কাউকে আপনার পেইড সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর জন্য টাকা দেওয়াই লাগবে।

অর্গানিক এবং পেইড সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর মধ্যে পেইড সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ই অধিক ব্যবহৃত হয়। পেইড সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং পদ্ধতিতে একাধিক গ্রাহক এর কাছে পৌছানো সহজ এবং দ্রুত হয়।

বাংলাদেশ এবং বিশ্বের বড় বড় কোম্পানি গুলো তাদের পন্য প্রচারের জন্য পেইড সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ব্যবহার করে থাকে।

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কেন করবেন? (Why do Social Media Marketing?)

বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ। এই যুগে তথ্য প্রযুক্তির বহুল ব্যবহার আমরা লক্ষ করে থাকি। ইন্টারনেট বিশেষভাবে সব জায়গায় এখন ব্যবহৃত হচ্ছে। ইন্টারনেট এর অন্যতম একটি আবিষ্কার বলা চলে সোশ্যাল মিডিয়া।

প্রায় সবারই সোশ্যাল মিডিয়ার সাইটে এখন একটি বা একাধিক অ্যাকাউন্ট আছে। অর্থাৎ মানুষের একটি ভার্চুয়াল উপস্থিতি আছে সোশ্যাল মিডিয়ার সাইটে। এখন এই ভার্চুয়াল উপস্থিতি কাজে লাগানো যায় সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর মাধ্যমে।

মানুষজনকে ভার্চুয়ালি পণ্য সম্পর্কিত মেসেজ পৌঁছে দেওয়া যায় সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করে। পাশাপাশি মার্কেটিং এর অন্য অনেক পদ্ধতির তুলনায় সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং খুবই সহজ এবং কার্যকরী একটি পদ্ধতি। 

যেমন বাংলাদেশে কোন কোম্পানীর বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থান করা মানুষের কাছে অফলাইনে তাদের পণ্য সম্পর্কিত মেসেজ পৌঁছে দিতে চায়। এখন বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে অফলাইনে বিজ্ঞাপন প্রচার করা খুবই জটিল এবং দুরূহ একটি কাজ।

অফলাইনে বিজ্ঞাপন প্রচার করার জন্য কোম্পানির লোকবল, সাংগঠনিক দক্ষতা, অর্থ এসব জিনিস লাগবে। আবার অফলাইনে বিজ্ঞাপন প্রচার এর অনেক জটিল এবং সময় সাপেক্ষ হবে। 

কিন্তু একই কাজ যদি সোশ্যাল মিডিয়া তে করা হলে খুব সহজেই বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে। ঘরে বসে শুধু ছবি বা ভিডিও এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সমস্ত মানুষকে পণ্যের বার্তা পৌছে দেওয়া যাবে। 

অর্থাৎ অফলাইনে মার্কেটিং করতে হলে যে লোকবল, সাংগঠনিক দক্ষতা লাগবে তা সোশ্যাল মিডিয়া তে দরকার নেই। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে খুব সহজেই এসব ছাড়াই মানুষের কাছে পণ্য সম্পর্কিত মেসেজ পৌঁছে দেওয়া যায়।

আবার সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এ রিটার্ন অফ ইনভেস্টমেন্ট খুব দ্রুত লাভ করা যায় অফলাইন মার্কেটিং এর তুলনায়।  

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর আরেকটি সুবিধা হচ্ছে গ্রাহকদেরকে শ্রেণীর ভিত্তিতে টার্গেট করার সক্ষমতা। অর্থাৎ সুনির্দিষ্ট শ্রেণীর গ্রাহকের সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর মাধ্যমে টার্গেট করা যায় খুব সহজে।

এটা খুবই স্বাভাবিক যে কোনো পণ্যের ক্রেতা সব শ্রেণী-পেশার মানুষ হবে না। যেমন ছেলেদের পোশাকের ক্রেতা স্বাভাবিকভাবে ছেলেরাই হবে। এখন অফলাইন মার্কেটিং এ এমন কোনো ব্যবস্থা নেই যাতে সুনির্দিষ্টভাবে ওই শ্রেণীর গ্রাহকদেরকে টার্গেট করা যায় মার্কেটিংয়ের জন্য। 

 

কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর এই অনন্য সুবিধা আছে। এখানে আপনি একটি সুনির্দিষ্ট শ্রেণীর গ্রাহকদেরকে টার্গেট করে মার্কেটিং করতে পারবেন। 

ধরুন কোন বিজ্ঞাপনদাতা চান যে ছেলেদের পোশাক সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন গুলো শুধু ছেলেরাই দেখুক। সে এখন সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর মাধ্যমে ছেলেদের পোশাক সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন শুধু ছেলেদেরকে বিজ্ঞাপনের জন্য প্রদর্শন করতে পারবে।

এভাবে সুনির্দিষ্ট শ্রেণীকে টার্গেট করে বিজ্ঞাপন প্রচার করার ফলে বিজ্ঞাপন এ ব্যবহৃত অর্থের পরিমাণ যথার্থভাবে ব্যবহৃত হবে। ফলে রিটার্ন অফ ইনভেসমেন্ট পাওয়া তুলনামূলকভাবে অনেক দ্রুত হবে অফলাইন মার্কেটিং এর তুলনায়।

কিভাবে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করবেন?

নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে যে এই মার্কেটিং এর মূল মাধ্যম হলো সোশ্যাল মিডিয়া। বাংলাদেশ যেই মাধ্যম বা যে সোশ্যাল মিডিয়া সবচাইতে বেশি জনপ্রিয় তা হল ফেসবুক। পাশাপাশি ইনস্টাগ্রাম ও বাংলাদেশের অনেকে ব্যবহার করে থাকে।

আমরা এখন ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করে কিভাবে মার্কেটিং করা যায় সে সম্পর্কে আলোচনা করব।

ফেসবুকের মাধ্যমে মার্কেটিং 

ফেসবুকের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করার অনেকগুলো উপায় আছে। আমরা এখন ফেসবুক এর মাধ্যমে কিভাবে মার্কেটিং করা যায় এ সম্পর্কিত কয়েকটি পদ্ধতি আলোচনা করব।

ফেসবুক পেজ বুস্টিং এর মাধ্যমে মার্কেটিং করা

এই পদ্ধতিতে ফেসবুকে কিছু অর্থ প্রদানের মাধ্যমে নির্দিষ্ট শ্রেণীর মানুষের কাছে পণ্য সম্পর্কিত বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়। এই পদ্ধতিটি তুলনামূলকভাবে অত্যন্ত ব্যয়বহুল একটি পদ্ধতি। কিন্তু এটি খুবই চমৎকার ভাবে কার্যকরী একটি পদ্ধতি।

এই পদ্ধতির বিশেষত্ব হল এখানে আপনি সুনির্দিষ্ট শ্রেণীর মানুষের কাছে আপনার পণ্য সম্পর্কিত বার্তা নিখুঁতভাবে পৌঁছে দিতে পারেন। 

যেমন ধরুন ফেসবুকে কেউ মেয়েদের পণ্য যেমন মেয়েদের পোশাক বিক্রয় করে। এখন সে যদি এই পদ্ধতির আশ্রয় নেয় তবে সে বিজ্ঞাপনগুলো কে দেখবে তা পুরোপুরি নির্ধারণ করতে পারবে। 

এমনভাবে বিজ্ঞাপন সেট করতে পারবে যে শুধু মেয়েদের কাছে তার পোশাক সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন গুলো প্রদর্শন করবে। এভাবে সুনির্দিষ্ট শ্রেণীর মানুষকে টার্গেট করা যায় দেখে এই পদ্ধতিটি অত্যন্ত জনপ্রিয় পদ্ধতি।

এই পদ্ধতিতে রিটার্ন অফ ইনভেস্টমেন্ট ও দ্রুত লাভ করা যায়। তবে বাংলাদেশ থেকে এ পদ্ধতির মার্কেটিং অনেকেই করতে পারেন না। কারণ এখানে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা লাগবে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য।

বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষের কাছে এ ধরনের কার্ড সহজলভ্য না থাকায় অনেকেই এই পদ্ধতিতে মার্কেটিং করতে পারেন না।

আরও দেখুন: 

ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং

ইনফ্লুয়েন্সার  বলা হয় তাদেরকে যাদের ফেসবুক বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলনামূলক ভাবে বিশাল সংখ্যক ফলোয়ার আছে। তারা তাদের এই ফলোয়ারদের কে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখেন তাই তাদেরকে ইনফ্লুয়েন্সার বলা হয়।

এ পদ্ধতিতে মার্কেটিং অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে প্রথমে পণ্যের প্রচার এর জন্য একজন ইনফ্লুয়েন্সার কে সিলেক্ট করা হয়। 

তারপর সেই ইনফ্লুয়েন্সার কিছুসংখ্যক অর্থের বিনিময়ে ওই পণ্যের পোস্ট তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছুদিনের জন্য শেয়ার করে। এই শেয়ার করার মাধ্যমে যারা ঐ ইনফ্লুয়েন্সার কে ফলো করছে তারা ওই পণ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন পোস্টগুলো দেখতে পাই।

ওই ইনফ্লুয়েন্সার এর ফলোয়ার রা যেহেতু তাদের পরিচিত ইনফ্লুয়েন্সার এই পণ্যের প্রচার করছে তাই পন্যটি সম্পর্কে মনোযোগী হয়। তখন তারা পণ্যটি ব্যবহার করতে বা ক্রয় করতে অধিকতর আশ্বস্ত বোধ করে। 

ফেসবুকে পেজ বা গ্রুপ এর মাধ্যমে মার্কেটিং

ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ বা গ্রুপ এর মাধ্যমেও আপনি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করতে পারেন। এর ফলে ওই পেজ বা গ্রুপ এর যেসব ফলোয়ার আছে তারা এই পণ্য সম্পর্কে বিভিন্ন পোস্ট দেখতে পাবে।

এর মাধ্যমে তারা ওই পণ্য সম্পর্কে জানতে পারবে। ফলে পণ্য ব্যবহার করতে বা ক্রয় করতে আগ্রহী হবে।

এইগুলো হল ফেসবুকের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করার কিছু উপায়। 

ইন্সটাগ্রাম এর মাধ্যমে মার্কেটিং 

ফেসবুকের পর ইনস্টাগ্রাম বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এখানে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করা যায়। ইনস্টাগ্রামে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং অনেকাংশেই ফেসবুকের মত।

তবে ইনস্টাগ্রামে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করার সবচাইতে কার্যকরী যে পদ্ধতি বাংলাদেশে তা হলো ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং। 

বিশেষ করে পোশাক এর বিভিন্ন ব্র্যান্ড এবং বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করে। কারণ এখানে ছবির কোয়ালিটি অত্যন্ত উচ্চ মানের এবং বিভিন্ন ইনফ্লুয়েন্সার এর সাহায্যে তারা তাদের পণ্যের প্রচার প্রচারণা করে থাকে।

এছাড়াও ইনস্টাগ্রামে পোস্ট বা পেজ বুষ্টিং এর মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করা যায়।

ফেসবুক ইনস্টাগ্রাম ছাড়াও আরো কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আছে যা বাংলাদেশ ব্যবহার করা হয়। তবে এসবের ব্যবহারকারীর সংখ্যা খুবই অল্প।

যেমন টুইটার বিশ্বের অন্যান্য দেশে খুবই জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হলেও বাংলাদেশে খুব অল্প মানুষ এর ব্যবহার করে। ব্যবহারকারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে নগন্য থাকায় এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করা হয় না বললেই চলে।

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কিভাবে শিখবেন?

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং সম্পর্কে আপনি এখন হয়তো চিন্তা করছেন যে কিভাবে আপনি এই পদ্ধতিতে মার্কেটিং শিখতে পারেন। আমরা এখানে কিভাবে আপনি এই মার্কেটিং শিখতে পারেন সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করব। 

বাংলাদেশের অনলাইন একাডেমি থেকে 

বাংলাদেশে বিভিন্ন অনলাইন একাডেমি আছে যারা সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং শিখিয়ে থাকে। আপনি এগুলো থেকে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং শিখতে পারেন। 

তবে এই সকল একাডেমিতে ভর্তি হওয়ার আগে আপনি জেনে নিবেন এখানে যারা সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং শেখাচ্ছেন তাদের যোগ্যতা সম্পর্কে।

অনেক সময় দেখা যায় যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও অনেকে শুধু ওয়েবসাইট খুলে এ ধরনের কোর্স অফার করে থাকেন। তাদের থেকে আপনাকে অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে।

বাংলাদেশের এসব অনলাইন একাডেমিতে কোর্স করার সুবিধা হল যে আপনি বাংলা ভাষায় সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং শিখতে পারবেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করার যেসব সমস্যা হয় তারা এগুলো অনেক ভালো বলতে পারবে।

আপনি যে অনলাইন একাডেমী থেকে কোর্স করেন না কেন আপনি অবশ্যই তাদের কাছ থেকে আপনার কোর্স করার সার্টিফিকেট নিবেন। 

বিদেশের বিভিন্ন অনলাইন একাডেমি থেকে

বিদেশে বিভিন্ন অনলাইন একাডেমি আছে যারা সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর উপর বিভিন্ন ধরনের কোর্স করিয়ে থাকে। এরকম বিখ্যাত কয়েকটি অনলাইন একাডেমিক হলো udemy, udacity, coursera. 

এগুলো একাডেমিতে আপনি অর্থ প্রদান করে বিশ্বমানের সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারেন। 

যদি সুযোগ থাকে তবে সর্বোত্তম হলো এই ধরনের অনলাইন একাডেমী থেকে কোর্সগুলো করা। কারণ এখানে যে শিক্ষকেরা এই কোর্সগুলো করান তারা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে খুবই বিশেষজ্ঞ হয়ে থাকেন। পাশাপাশি এই কোর্স গুলোতে খুবই উন্নত মানের টিচিং ম্যাটেরিয়ালস প্রদান করা হয়। 

বিদেশের এই অনলাইন একাডেমি গুলোর আর একটি অনন্য দিক হল যে আপনি এখানে শিক্ষকদের রিভিউ দেখতে পারবেন। এই শিক্ষকের ক্লাস পূর্বে যে শিক্ষার্থীরা সম্পন্ন করেছে তাদের এই শিক্ষকের ক্লাস কেমন লেগেছে সেগুলো রিভিউ আকারে দেখতে পারবেন। 

মাত্র ১০ ডলার থেকে শুরু করে এগুলো অনলাইন একাডেমি তে বিভিন্ন ধরনের কোর্স করা যায়।

এভাবে আপনি বিদেশের বিভিন্ন অনলাইন একাডেমী থেকে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং শিখতে পারেন। 

অনলাইন একাডেমি ছাড়াও অফলাইনেও আপনি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর কোর্স করতে পারেন। বাংলাদেশে এখন অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর উপর অফলাইনে বিভিন্ন ধরনের কোর্স করিয়ে থাকে।

আপনি এই সকল অফলাইন কোর্স করেও সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং শিখতে পারেন।

বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর অপার সম্ভাবনা

বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর অপার সম্ভাবনা আছে। বাংলাদেশে অনেক প্রতিভাবান সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটার আছে।  এসব প্রতিভাবান সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটার দিয়ে মার্কেটিং করিয়ে বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানি গুলো তাদের পন্য বিক্রি করতে পারে সহজেই।

আবার দেশে ই- কমার্স ব্যবসার বাজার ও প্রতিদিন প্রসারিত হচ্ছে। বাংলাদেশের ই- কমার্স ব্যবসার প্রসারে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর মাধ্যমে ই- কমার্স পন্য গুলোর মার্কেটিং করা সহজ হয়। 

তবে বাস্তবতা হল বেশিরভাগ বাংলাদেশি কোম্পানি এখনো ট্রাডিশনাল উপায়ে মার্কেটিং করে যাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর স্ট্রাটেজি এখনো অনেক কোম্পানি আয়ত্ত করতে পারে নি।

আবার বাংলাদেশে চাহিদার তুলনায় খুব অল্পই সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর এক্সপার্ট আছেন। এটাও অন্যতম কারণ বহুজাতিক কোম্পানি গুলোর সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এ পিছিয়ে থাকার।

তবে এই অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। আস্তে আস্তে অনেক কোম্পানি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর দিকে ঝুকছে।  ভবিষ্যৎ এ বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং সেক্টর কয়েক বিলিয়ন ডলারের হবে বলে আশা করা যায়।

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করে আয়

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করে খুব ভাল পরিমাণে আয় করা সম্ভব। অনেক সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং স্পেশালিষ্ট মাসে লাখ খানিক টাকা আয় করে থাকে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে।

আবার অনেক নামিদামি কোম্পানি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং স্পেশালিষ্ট নিয়োগ দিয়ে থাকে। এগুলো কোম্পানি তেও সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং স্পেশালিষ্ট হিসেবে কাজ করা যায়।

পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর ক্ষেত্র দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং সম্পর্কিত আমাদের এই লেখাটি কেমন লেগেছে তা আমাদের জানান।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top