ওয়েব হোস্টিং কি?, কত প্রকার, দাম, কেনার নিয়ম

আপনি যদি ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান তাহলে আপনার ওয়েব হোস্টিং (Web Hosting) কি এটি জানা খুবই জরুরী। আমাদের থাকার জন্য যেমন জায়গার প্রয়োজন হয়, ঠিক তেমনি অনলাইনে একটি ওয়েবসাইটকে রাখার জন্য ওয়েব হোস্টিং এর প্রয়োজন হবে।

কেননা ওয়েব হোস্টিং ছাড়া একটি ওয়েবসাইট কে অনলাইনে চালু রাখা সম্ভব নয়। যেমন আপনি আমাদের ওয়েবসাইট অনলাইন ইনকাম বিডি ভিজিট করতে চান, এটি একটি ওয়েব সার্ভারে (Web Server) সংযুক্ত করা রয়েছে যেখান থেকে ডাটাগুলো এখানে দেখানো হচ্ছে। যে সার্ভারে ওয়েবসাইটটি রাখা হয়েছে সেটাকে ওয়েব হোস্ট (Web Host) বলে।

একটি ওয়েবসাইট কে অনলাইনে চালু করার জন্য অবশ্যই Domain ও Hosting প্রয়োজন হবে। আমাদের ওয়েবসাইটে ডোমেইন সম্পর্কে বিস্তারিত একটি আর্টিকেল দেওয়া রয়েছে আপনি ইচ্ছা করলে পড়ে নিতে পারেন।

ওয়েব হোস্টিং কি

ওয়েব হোস্টিং কি? (What Is Web Hosting?)

ওয়েব হোস্টিং হচ্ছে একটি অনলাইনের একটি জায়গা। যেখানে আপনার ওয়েবসাইট এর সকল তথ্য জমা থাকবে। সেই জমাকৃত তথ্য অনলাইনে আপনার ওয়েবসাইট ভিজিট করলে দেখা যাবে।

আমরা যখন হোস্টিং কিনি তখন হোস্টিং কোম্পানি আমাদেরকে ইন্টারনেটের ওয়েব সার্ভারে কিছু জায়গা দেয়। যেখানে আমরা File, Audio File, Image File, Media, Text Article ইত্যাদি অনলাইলে ফাইল আপলোড করতে পারি।

এই সার্ভারটি হচ্ছে একটি কম্পিউটার। যেটি ২৪ ঘন্টা অনলাইনে চালু থাকে। এটি 24 ঘন্টা অনলাইনে চালু থাকার জন্য আমরা যখন তখন যে কোন ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারি।

আপনি এই যে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করে বিভিন্ন ধরনের ইমেজ, ও আর্টিকেল দেখতে পান এটি আমাদের ওয়েব সার্ভারে আপলোড করা হয়েছে। আপলোড করা হয়েছে বিধায় আপনি আমাদের ওয়েবসাইটে এসে এই তথ্যগুলো দেখতে পাচ্ছেন।

এতক্ষণ তো আমরা জানলাম ওয়েব হোস্টিং কিG (What Is Web Hosting Bangla) তো এখন চলুন, ওয়েব হোস্টিং কত প্রকার, ও কি কি তা জানি।

আপনি এগুলো দেখতে পারেন: 



ওয়েব হোস্টিং কত প্রকার? (Types of Web Hosting?)

আপনি যদি ব্লগিং করতে চান তাহলে ওয়েব হোস্টিং বিষয়টি ভালোভাবে জানার পর, ওয়েব হোস্টিং কত প্রকার এটিও জানা বিশেষ জরুরী। কেননা ওয়েবসাইটের ধরনের উপর নির্ভর করে বিভিন্ন ধরনের ওয়েব হোস্টিং রয়েছে। আপনার ওয়েবসাইট ধরনের উপর নির্ভর করে ওয়েব হোস্টিং ক্রয় করতে হবে।

অনেক রকমের ওয়েব হোস্টিং রয়েছে। তবে আমরা নিচে যেই ওয়েব হোস্টিং গুলো বেশি পরিমাণে ব্যবহার করা হয় সেগুলো উল্লেখ করব। কেননা আপনি যেহেতু ওয়েবসাইটের জন্য হোস্টিং ক্রয় করবেন, আশা করি নিচের ওয়েব হোস্টিং গুলোর মধ্যে থেকে আপনার যেকোনো একটি প্যাকেজ হলেই চলবে।

  1. শেয়ারেড হোস্টিং (Shared Hosting)
  2. ভিপিএস হোস্টিং (Virtual Private Hosting VPS)
  3. ডেডিকেটেড হোস্টিং (Dedicated Hosting)
  4. ক্লাউড হোস্টিং (Cloud Hosting)

Shared Hosting

শেয়ারেড হোস্টিং (Shared Hosting) হচ্ছে একটি সার্ভারের জায়গা একাধিক ওয়েবসাইটের সঙ্গে শেয়ার করা। অর্থাৎ ধরেন আপনি একটি সার্ভার ক্রয় করলেন যেটিতে আপনি একাধিক ওয়েবসাইট হোস্ট (Host) করলেন। এই যে সার্ভারের জায়গাটি অন্য একটি ওয়েবসাইটের সঙ্গে শেয়ার করা হলো এটি শেয়ারেড হোস্টিং।

শেয়ারেড হোস্টিং (Shared Hosting) এর কিছু সুবিধা অসুবিধা রয়েছে যেগুলো আপনার জানা জরুরী। নিচে আমরা এর সুবিধা ও অসুবিধাগুলো উল্লেখ করে দিলাম।

শেয়ারেড হোস্টিং (Shared Hosting) এর সুবিধা

  1. আপনি অনেক অল্প মূল্যে ক্রয় করতে পারবেন।
  2. একটি নতুন ওয়েবসাইটের জন্য এই প্যাকেজটি অনেক ভালো। (আমি নিজেও যখন ওয়েবসাইট শুরু করেছিলাম সে সময় এই প্যাকেজ দিয়েই আমার শুরু হয়েছিল)
  3. মাসিক ৫০ থেকে ২০০ টাকায় শেয়ারেড হোস্টিং পাবেন।

শেয়ারেড হোস্টিং (Shared Hosting) এর অসুবিধা

  1. শেয়ারেড হোস্টিং এ সাধারণত সাইটের স্পিড কম থাকে।
  2. শেয়ারেড হোস্টিং সার্ভারে মাঝে মাঝে তুলনামূলক একটু বেশি সমস্যা দেখা দেয় অন্যান্য হোস্টিং সার্ভিস এর তুলনায়।
  3. শেয়ার হোস্টিং এর জায়গা কম থাকায় কত বেশি পরিমাণে ফাইল আপলোড করা যায় না।

Virtual Private VPS Hosting

ভিপিএস হোস্টিং (Virtual Private Hosting VPS) হচ্ছে শেয়ারেড হোস্টিং এর চাইতে অনেক গুণ ভালো। সাধারণত ওয়েবসাইট শুরুর ক্ষেত্রে শেয়ারেড হোস্টিং ব্যবহার করা ভালো। আর অন্যদিকে যখন একটি ওয়েবসাইট জনপ্রিয় হয়ে যায় এবং প্রচুর পরিমাণে ভিজিটর আসে ওয়েবসাইটে সেসময় ভিপিএস হোস্টিং (Virtual Private Hosting VPS) ব্যবহার করা উচিত।

ভিপিএস হোস্টিং হচ্ছে প্রাইভেট হোস্টিং। অর্থাৎ আপনার কেনা একটি সার্ভার (Server) থেকে যে নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গা সেটি অন্যের সঙ্গে শেয়ার হবে না। যেটি শেয়ারেড হোস্টিং ক্রয়ের ক্ষেত্রে শেয়ার হয়ে থাকে। অর্থাৎ আপনার সার্ভারের দেওয়া জায়গা শুধুমাত্র আপনি ব্যবহার করবেন। এতে আপনার ওয়েবসাইট ভালো স্পিডের পাশাপাশি ভিজিটর এর সাথে ভালো ব্যালেন্স রাখতে পারবে।

ভিপিএস হোস্টিং এর সুবিধা

  • আপনার ওয়েবসাইটে যখন প্রচুর পরিমাণে ভিজিটর আসবে, সে সময় যদি আপনি শেয়ারেড হোস্টিং ব্যবহার করেন, তাহলে আপনার ওয়েবসাইট মাঝেমধ্যে বন্ধ হয়েও যেতে পারে। কারণ বেশি ভিজিটর মানে আপনার ওয়েবসাইটে সার্ভারে বেশি পরিমাণে রিকুয়েস্ট যাওয়া। যদি আপনি ভিপিএস হোস্টিং ব্যবহার করেন তাহলে আপনার ওয়েবসাইটের স্পিড ভালো থাকার পাশাপাশি অনলাইনে সাইট ভালোভাবে সচল থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
  • শেয়ারেড হোস্টিং চেয়ে ভালো সিকিউরিটি পাওয়া যাবে।
  • মাসিক ১০,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকায় ভিপিএস হোস্টিং পাবেন।

Dedicated Hosting

ডেডিকেটেড হোস্টিং অন্যান্য হোস্টিং এর চাইতে সম্পূর্ণ আলাদা। ডেডিকেটেড হোস্টিং এর ক্ষেত্রে আপনি একটি পুরো সার্ভার কিনে নেবেন। এ সার্ভারের মধ্যে অন্য কারো ওয়েবসাইট রাখার কোন অধিকার থাকবে না।

যেমন শেয়ার হোস্টিং এর ক্ষেত্রে সার্ভার শেয়ার হয়ে থাকে, ও ভিপিএস হোস্টিং এর ক্ষেত্রে একটি সার্ভারের নির্দিষ্ট পরিমান জায়গা দেয়া হয়, কিন্তু ডেডিকেটেড হোস্টিং এর ক্ষেত্রে অন্য কোন ওয়েবসাইটের সঙ্গে কোন প্রকার কোন কিছু শেয়ার করা হয় না।

আপনি মনে রাখবেন, ডেডিকেটেড হোস্টিং (Dedicated Hosting) শুধুমাত্র জনপ্রিয় ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে থাকে। কেননা সাধারণত ছোট মনের ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে শেয়ারেড হোস্টিং দিয়ে ভালো করে চালানো যায়। আপনি তখনই এই হোস্টিং ব্যবহার করবেন যখন আপনার ওয়েবসাইটে প্রচুর পরিমাণে ভিজিটর আসতে থাকবে।

Benefits of Dedicated Hosting

ডেডিকেটেড হোস্টিং (Dedicated Hosting) এর কিছু সুবিধা রয়েছে যার দরুন এটি অনেক ওয়েবসাইটের মালিক ব্যবহার করে থাকে।

  1. নিরাপত্তা ভালো পাওয়া যায়।
  2. প্রচুর পরিমাণে ওয়েবসাইটে ভিজিটের আসলে কোন প্রকার সমস্যা হয় না।
  3. ওয়েবসাইট/ব্লগের স্পিড অনেক ভালো থাকে।
  4. মাসিক ৬,০০০+ থেকে ডেডিকেটেড হোস্টিং পাবেন।

Cloud Hosting

ক্লাউড হোস্টিং (Cloud Hosting) হচ্ছে ওয়েবসাইটের মালিকের কাছে অন্যান্য হোস্টিংয়ের চাইতে বেশি ভরসার নাম। কেননা ক্লাউড হোস্টিং ব্যবহার করলে আপনি অনেকাংশে আপনার ওয়েবসাইটের স্পিড বা অনলাইনে একটিভ থাকা নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।

কেননা অন্যান্য হোস্টিং প্যাকেজের তুলনায় ক্লাউড হোস্টিং (Cloud Hosting) অনেক বেশি ভালো মানের হয়ে থাকে। আপনি যদি ক্লাউড হোস্টিং (Cloud Hosting) ব্যবহার করেন তাহলে আপনার ওয়েবসাইট সুপারফাস্ট পাবেন। আপনার ওয়েবসাইটে যে কোন ভিজিটের আসে খুব দ্রুত সময়ে ভিজিট করতে পারবে।

ক্লাউড হোস্টিং (Cloud Hosting) এ অনেকগুলো সার্ভার একসঙ্গে রাখা হয়। যার দরুন যদি আপনার সার্ভারে CPU, RAM, Storage প্রয়োজন অনুসারে কমিয়ে বাড়িয়ে নিতে পারবেন।  এটা আপনার ওয়েবসাইট কোন সময় বন্ধ থাকবেনা। কারণ আপনার সার্ভারের সমস্যা হলেও অন্য একটি সার্ভার দ্বারা অটো ওয়েবসাইট চালু থাকবে।

ক্লাউড হোস্টিং (Cloud Hosting) সার্ভার ডাউন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম। কারণ ক্লাউড হোস্টিং অটো ব্যালেন্সিং করে একটি ওয়েবসাইটকে অনলাইনে ২৪ ঘন্টা সজল রাখে। যখন আপনার সার্ভারে সমস্যা হবে ঠিক সে সময় অন্য একটি সার্ভার থেকে আপনার ওয়েবসাইট সচল রাখা হবে।

Benefits of Cloud Hosting

  1. ক্লাউড হোস্টিং (Cloud Hosting) এ ভিজিটর নিয়ে টেনশন করতে হয় না। আপনার ওয়েবসাইটে যদি একসঙ্গে এক লক্ষ ভিজিটরা ঢুকে এতে কোন সমস্যা হবে না।
  2. সাইটের নিরাপত্তা অনেক উচ্চমানের থাকে।
  3. সাইটের স্পিড থাকে সুপার ফাস্ট।
  4. মাসিক ৪,০০ থেকে ১,০০০ টাকায় ক্লাউড হোস্টিং পাবেন।

আপনার কোন হোস্টিং কেনা উচিত? (Which hosting should you buy?)

এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে আপনি কোন হোস্টিং নিবেন, এটি নির্ভর করবে আপনার ওয়েবসাইটের উপর। আপনি যদি সবে মাত্র একটি ওয়েবসাইট শুরু করতে চান, তাহলে আমি আপনাকে সাজেশন করব আপনি শেয়ারেড হোস্টিং নিতে পারেন।

কেননা আপনার ওয়েবসাইটের শুরুর দিকে খুব অল্প পরিমাণে ভিজিটর আসবে। আর অল্প পরিমাণে ভিজিটের জন্য সেরা হোস্টিং প্যাকেজ হচ্ছে শেয়ারেড হোস্টিং। তাছাড়া আপনি অল্প টাকাতে শেয়ারেড হোস্টিং পেয়ে যাবেন।

আর যদি আপনার ওয়েবসাইটে ভালো পরিমাণে ভিজিটর থাকে তাহলে আপনি আপনার ইনকামের উপর নির্ভর করে হোস্টিং প্যাকেজ কিনতে পারেন।

আপনার ওয়েবসাইটে যখন ভালো পরিমাণে ভিজিটর আসবে তখন আপনি ক্লাউড হোস্টিং নিতে পারেন। ওয়েব হোস্টিং এর ক্ষেত্রে ক্লাউড হোস্টিং সার্ভিসটি অনেক ভালো মানের।

এছাড়া আপনার ওয়েবসাইটে যখন প্রচুর পরিমাণে ভিজিটর আসবে তখন আপনি ডেডিকেটেড সার্ভার নিতে পারেন। এতে আপনার প্রচুর পরিমাণে ভিজিটর আসাতে আপনার ওয়েবসাইটের সার্ভারে কোন প্রকার প্রবলেম হবে না। আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিটররা খুব সহজে আপনার ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারবে।

ওয়েব হোস্টিং কোথা থেকে কিনবেন (Where to buy web hosting?)

এই প্রশ্ন হয়তোবা আপনার মনে রাখতে পারে। আমি আপনাকে সাজেশন দেবো যদি আপনার মাস্টার কার্ড থাকে (ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্ট সিস্টেম) ব্যবহার করার জন্য, তাহলে অবশ্যই আপনি আন্তর্জাতিক জনপ্রিয় ওয়েব হোস্টিং কোম্পানি থেকে আপনার হোস্টিং ক্রয় করবেন।

শেষ কথা,

আশা করি আপনি যদি ওয়েব হোস্টিং ক্রয় (Web Hosting) করতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার অনেক উপকারে আসবে। আপনার প্রতি আমি অবশ্যই কৃতজ্ঞ, কেননা আপনি আমাদের এই আর্টিকেলে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন।

আশা করি আপনি ওয়েব হোস্টিং কি (Web Hosting) আর্টিকেলটি অনেক উপভোগ করেছেন। আপনি যদি মনে করেন অন্যরা এই বিষয়ে জানলে উপকৃত হবে, তাহলে অবশ্যই আপনি লোকদের সঙ্গে এটি শেয়ার করবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top